টিসিপি / আইপি প্রোটোকল কী?

প্রোটোকল

আমরা ইন্টারেনটের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে জেনেছি, ১৯৬৯ সালে আরপানেটে চারটি হোস্ট কম্পিউটার সংযুক্ত ছিল। পরবর্তী বছরগুলোতে আরপানেটে আরো কম্পিউটার সংযুক্ত করা হতে থাকে। তখন গবেষকেরা দুটি কম্পিউটারের মধ্যে যোগাযোগে জন্য নীতিমালা বা প্রোটোকল প্রণয়ন করতে থাকেন এবং হোস্ট-টু-হোস্ট প্রোটোকল নামে একটি প্রোটোকল প্রণয়ন করা হয়।

১৯৭২ সালে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক মেইল বা ইমেইল পাঠানোর ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়। তখন এই একটি নেটওয়ার্ক নিয়েই ছিল সমগ্র ইন্টারনেট। এখন পর্যন্ত যেহেতু একটিই নেটওয়ার্ক ছিল তাই এটি ছিলো বেশ আদিম প্রকৃতির, এতে ভূলত্রুটি সনাক্তকরণ বা সংশোধন (Error Control) এর কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ইন্টারনেটের মৌলিক ধারনাই ছিল বিভিন্ন (অর্থাৎ, একাধিক) স্বাধীন নেটওয়ার্ক যেনো একটি সাধারন পথ ব্যবহার করে ইন্টারনেটের অন্যান্য নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে তথ্য আদান প্রদান করতে পারে। অর্থাৎ, যে কেউই চাইলে নিজের মত নেটওয়ার্ক ডিজাইন ও তৈরী করে ইন্টারনেটে যেনো সংযুক্ত হতে পারে।

তাই পরবর্তীতে রবার্ট কান (Robert E. Kahn) ওপেন-আর্কিটেকচার নেটওয়ার্কের সংযোগ ব্যবস্থার জন্য একটি নীতিমালা বা প্রোটোকল প্রণয়ন করেন। প্রোটোকল শব্দের অর্থ হচ্ছে নিয়মনীতির সমস্টি যা আলোচনার ভিত্তিতে তৈরী করা হবে এবং যা পরবর্তীতে সবাই মেনে চলবে। রবার্ট কানের প্রণীত এই প্রোটোকলই পরে ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোটোকল বা ইন্টারনেট প্রোটোকল (Transmission Control Protocol / Internet Protocol; TCP/IP) নামে পরিচিত হয়। ইন্টারনেট প্রোটোকল হচ্ছে দুটি কম্পিউটার ঠিক কীভাবে ডেটা পাঠাবে, সেই ডেটাগুলো বিভিন্ন নেটওয়ার্ক থেকে বিভিন্ন নেটওয়ার্কে কীভাবে চলাচল করবে, ডেটা কোন পথে পাঠাতে হবে, তার গন্তব্যস্থান কীভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে, কোনো ডাটা প্যাকেট পথিমধ্যে হারিয়ে গেলে বা বাধাগ্রস্থ হলে কী করা হবে এই সব প্রশ্নের একটি সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য সমাধান।

টিসিপি / আইপি প্রোটোকল

রবার্ট কানের প্রস্তাবিত টিসিপি / আইপি প্রোটোকল চারটি মূল নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়-

  1. প্রতিটি আলাদা আলাদা নেটওয়ার্ক স্বাধীনভাবে তৈরী ও রক্ষনাবেক্ষন করতে পারতে হবে। কোনরকম আভ্যন্তরীন পরিবর্তন ছাড়াই তারা যেন সরাসরি ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
  2. যোগাযোগ নিশ্চিত করা হবে “বেস্ট এফোর্ট” (Best Effort) ভিত্তিতে। অর্থাৎ, কোনো ডেটা প্যাকেট যদি গন্তব্যে সঠিকভাবে পৌছাতে না পারে (যদি গন্তব্য খুঁজে না পায় অথবা, কোনোভাবে সংযোগটি ক্ষনিকের জন্য বাধাগ্রস্থ হয়), তবে উৎস থেকে পুনরায় ডেটা প্যাকেটটি পাঠানো হবে।
  3. প্রতিটি নেটওয়ার্ককে একটি ব্ল্যাকবক্স (Blackbox) হিসেবে চিন্তা করতে হবে। অর্থাৎ, নেটওয়ার্কটি একটি সাধারন গেটওয়ে বা রাউটার ব্যবহার করে মূল ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। একটি গেটওয়ের মধ্য দিয়ে যেসব ডেটা প্যাকেট যাওয়া আাসা করতে তার কোনরকম তথ্য ওই গেটওয়েতে সংরক্ষণ করা হবে না। যাতে করে তথ্য আদানপ্রদান ব্যহত হলে বা অন্য কোনরকম সমস্যা হলে জটিলতা পরিহার করা যায়।
  4. অপারেশন বা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে কোনো বৈশ্বিক কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রন (Global Central Control) থাকবে না।

এই চারটি মূলনীতি ছাড়াও যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ভূমিকা ছিল-

  1. উৎস থেকে গন্তব্যে পাঠানো ডেটা প্যাকেট হারিয়ে গেলে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে পুনরায় সংযোগ চালু করে পুনরায় ডেটা প্যাকেট পাঠানোর যথাযথ অ্যালগরিদম তৈরী করা।
  2. যদি অন্তর্বতী নেটওয়ার্ক অনুমতি দেয় তবে, উৎস থেকে গন্তব্যে সরাসরি হোস্ট-টু-হোস্ট পাইপলাইন তৈরী করা, যাতে করে একই পথ বা রুট (Route) ব্যবহার করে অন্য কাউকে অবহিত করা ছাড়াই দুটি হোস্টের মধ্য একাধিক ডেটা প্যাকেট আদান-প্রদান করা যায়।
  3. গেটওয়েতে কিছু ফাংশনালিটি তৈরী করা যাতে করে গেটওয়ে একটি প্যাকেটকে ছোট ছোট খন্ডে ভেঙ্গে তার হেডার (Header) তথ্য পড়ে বুঝতে পারে কোন প্যাকেটটিকে নিজে রাখতে হবে, কোন প্যাকেটটিকে অন্য নেটওয়ার্ক গেটওয়েতে ফরওয়ার্ড করতে হবে ইত্যাদি।
  4. চেকসাম (Checksum) ব্যবহার করা যাতে করে প্যাকেট গ্রহনের পর প্যাকেটটি সঠিক আছে কিনা (অর্থাৎ পথিমধ্যে বাহ্যিক কোনো প্রভাবে বা সংযোগ সংক্রান্ত ত্রুটি বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে পরিবর্তিত হয়ে গেলো কি না) বা, একই প্যাকেট দুইবার এলো কিনা তা বুঝতে পারা যায়।
  5. বৈশ্বিক একটা অ্যাড্রেসিং সিস্টেম বা ঠিকানা ব্যবস্থা তৈরী করা, যাতে করে একটি নেটওয়ার্ক অপর একটি নেটওয়ার্ককে সেই ঠিকানা ব্যবহার করে সহজে খুঁজে পেতে পারে।
  6. হোস্ট-টু-হোস্ট ফ্লো কন্ট্রোল করা অর্থাৎ, একটি হোস্ট থেকে অন্য হোস্টে কত গতিতে তথ্য পাঠানো হবে তা নির্ণয় করা। কারন, সকল যন্ত্রের তথ্য প্রসেসিংয়ের ক্ষমতা এক নয়, আবার সকল নেটওয়ার্কের ব্যান্ডউইডথও সমান নয়।
  7. ভিন্ন ভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমে মধ্যে ইন্টারফেসিং করা।

যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই বিষয় গুলো নিয়ে তখন গবেষকরা চিন্তা করতে থাকেন এবং কীভাবে কোন সমস্যাটি সমাধান করা হবে সেই বিষয়ে তারা আলোচনা করতে থাকেন। কান স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ট কার্ফ (Vint Kerf) এর সঙ্গে দলবদ্ধ হয়ে ১৯৭৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক ওয়ার্কিং গ্রুপ (INWG) এর একটি সভায় প্রথম এই নীতিমালা টিসিপি / আইপি নামে উপস্থাপন করেন। এই সভায় আরো কিছু সমাধান প্রস্তাব করা হয়।

  1. দুটি কম্পিউটার প্রসেসের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান করা হবে বাইট স্ট্রিম (Byte Stream) হিসেবে। ইংরেজি স্ট্রিম শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রবাহ। সাধারনত পানির প্রবাহ বুঝাতে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়। বাইট স্ট্রিম মানে হচ্ছে ধারাবাহিক অনেকগুলো বাইটের প্রবাহ। বাইটকে কখনো অকটেট (Octet) বলা হয়ে থাকে। তাই বাইটস্ট্রিমকে কখনো কখনো অকটেটস্ট্রিম নামে অভিহিত করা হয়।
  2. যেই দুটি হোস্টের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করা হবে তাদের প্রসেসিংয়ের গতি বা নেটওয়ার্কের গতি বাস্তবে অসমান হতে পারে। তাই তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে ফ্লো কন্ট্রোল করা হবে। অর্থাৎ, ধীর গতির হোস্টের গতি অনুযায়ী তথ্য প্রবাহ হবে। এজন্য স্লাইডিং উইন্ডো (Sliding Window) নামে এক ধরনের অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হবে। তথ্য প্রাপ্তি নির্দেশ করার জন্য অ্যাকনলেজমেন্ট (Acknoeledgement) বা অ্যাক (Ack) সিগন্যাল পাঠানো হবে, যাতে প্রেরক বুঝতে পারে কোন ডেটা প্যাকেটগুলো প্রাপক ঠিকঠাকমতো পেয়েছে।
  3. হোস্ট ও ক্লায়েন্টকে নেটওয়ার্কের মধ্যে খুঁজে পাওয়ার জন্য কিছু ঠিকানা অ্যাড্রেসিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। যেটাকে পরবর্তীতে আইপি অ্যাড্রেস (IP Address) নামকরন করা হয়।

ইন্টারনেট ও বাংলাদেশ

এর আগের পোস্টে আমরা দেখেছি ইন্টারনেটের একেবারে শুরুর দিকের ইতিহাস। ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে যে এই ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা আসলে কীভাবে কাজ করে ও কীভাবে এর রক্ষণাবেক্ষন করা হয়। ইন্টারনেট মূলত দাড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপি এক ব্যাকবোন বা মেরুদন্ডের উপরে। ইন্টারনেটে সংযুক্ত হওয়ার মানে হচ্ছে এই ব্যাকবোনের সাথে সংযুক্ত হওয়া। বিভিন্ন দেশ মিলে বড় বড় অপটিকাল ফাইবার কেবল ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক তৈরী করে বিভিন্ন আইএসপি (ISP = Internet Service Provider) কে সংযোগ দেয়। এই আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো আবার বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ও শহরগুলোতে নেটওয়ার্ক স্থাপন করে। সেখান থেকে কখনো সরাসরি আবার কখনো স্থানীয় আইএসপি এর মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে ইন্টারনেট সংযোগ পৌছে দেয়। এভাবেই আমরা ইন্টারনেটে সংযুক্ত হতে পারি।

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট ভিত্তিক (VSAT) তথ্য আদানপ্রদানের সুযোগ চালু করে। তখন বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড (BTTB) দুটি আইএসপি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয় ইন্টারনেট সার্ভিস দেবার জন্য। সেই সময়ই বাংলাদেশ ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হয়। ধীরে ধীরে আইএসপি এর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০০৫ সাল নাগাদ দেশে প্রায় ১৮০ টি আইএসপি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে যারা ইন্টারনেট সার্ভিস দিতে থাকে। তখনকার সময় ইন্টারনেট ছিল মূলত ডায়াল-আপ ভিত্তিক, অর্থাৎ, কেবল টেলিফোন বা পিএসটিএন ল্যান্ডফোন দিয়ে আইএসপি এর নম্বরে ডায়াল করে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হতে হতো। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ কক্সবাজারে SEA-ME-WE 4 সাবমেরিন কেবলের সাথে সংযুক্ত হয়। এই সাবমেরিন কেবলটি নিয়ন্ত্রন ও রক্ষনাবেক্ষন করে ১৬ টি টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠানের একটি কনসোর্টিয়াম। এদের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানী লিমিটেড (Bangladesh Submarine Cable Company Limited, BSCCL)। এই কেবলের সর্বমোট তথ্য আদানপ্রদানের ক্ষমতা হচ্ছে 4600Gbit/s। এই কেবলটির সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য প্রায় ২০,০০০ কিলোমিটার এবং এর মোট ১৭টি ল্যান্ডিং পয়েন্ট রয়েছে সিঙ্গাপুর, মালয়শিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, সৌদি আরব, মিশর, তিউনিশিয়া, ইতালি, আলজেরিয়া ও ফ্রান্স দেশগুলোতে।

আমরা ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এই আইএসপি, মোবাইল অপারেটর ও ওয়াইম্যাক্স সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান থেকে বাসা-বাড়িতে ও অফিস-আদালতে ইন্টারনেট সংযোগ নেই। আইএসপি, ওয়াইম্যাক্স ইত্যাদি সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (BTRC) এর কাছ থেকে অনুমোদন বা লাইসেন্স ক্রয় করে। তারা দুটি উপায়ে ইন্টারনেটে তথ্য আদান প্রদান করে। এর একটি হচ্ছে ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (National Internet Exchange) বা নিক্স (NIX) আর অন্যটি হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (International Internet Gateway) বা আইআইজি (IIG)।

নিক্সের মাধ্যমে আভ্যন্তরীন বা ডমেস্টিক ইন্টারনেটে চাহিদা পূরণ করা হয়। যেমন, আমি যদি খুলনায় বসে ঢাকার কোনো সার্ভার থেকে তথ্য নিতে চাই, তবে সেটা নিক্স ব্যবহার করবে। ২০০৪ সালে নিক্সের অধীনে দুটি এক্সচেঞ্জ পয়েন্ট বসানো হয়। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন বা বিটিআরসি নিক্স লাইসেন্স উন্মুক্ত করে দেয় এবং বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে নিক্স লাইসেন্স দেয়।

আর কক্সবাজারস্থ সাবমেরিন কেবল গেটওয়া ব্যবহার করে বৈশ্বিক ইন্টারনেটের জন্য ব্যবহার করা হয় আইআইজি। অর্থাৎ, দেশের সমস্ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কোনো না কোনো আইএসপির সাথে সংযুক্ত হন। আবার বিভিন্ন ডেটা প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান দেশের বড় বড় বিভাগীয় শহর ও জেলা শহর পর্যন্ত কেবল নেটওয়ার্ক বসায়। আইএসপিগুলো এই কেবল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তথ্য পাঠায়। আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলো তখন সেই তথ্য সাবমেরিন কেবল ব্যবহার করে বহির্বিশ্বস্থ বিভিন্ন গন্তব্য নেটওয়ার্কের উদ্দেশ্যে ইন্টারনেটে পাঠায় এবং একইভাবে বহির্বিশ্বস্থ নেটওয়ার্কসমূহ থেকে প্রাপ্ত ডেটা দেশের আভ্যন্তরীন নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে যথাযথ প্রাপক আভ্যন্তরীণ আইএসপিসমূহের কাছে পাঠায়। আইএসপিগুলো আবার তখন সেই ডেটা যথাযথ ব্যবহারকারীর কাছে পাঠায়। বাংলাদেশে বর্তমানে দুটি আইআইজি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, একটি হচ্ছে ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড আর অন্যটি হচ্ছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানী লিমিটেড (BTCL)।

এই হলো মোটামোটি বাংলাদেশের ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা। ২০১৫ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ২১০ টি আইএসপি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিটিআরসি এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে প্রায় ছয় কোটি তেত্রিশ লক্ষ। যদিও এর প্রায় ছয় কোটি বা ৯৫ শতাংশই মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। ব্রডব্যান্ড বা ওয়াইম্যাক্স ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ছত্রিশ লক্ষ।

অপারেটর সাবস্ক্রাইবার (মিলিয়ন)
মোবাইল ইন্টারনেট 59.658
ওয়াইম্যাক্স (WiMAX) 0.112
আইএসপি ও পিএসটিএন 3.520
সর্বমোট 63.290

ইন্টারনেটের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

১৯৪৩

আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন প্রথম কম্পিউটার তৈরী করা হয় ১৯৪৩ সালে, যার নাম হচ্ছে ENIAC। যদিও এই কম্পিউটারটি প্রাথমিক ভাবে তৈরী করা হয়েছিলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে গোলাবারুদ নিক্ষেপের হিসাবনিকাশের উদ্দেশ্যে। তার ওজন ছিলো প্রায় ২৭টন আর এটি রাখার জন্য প্রায় ১৮০০ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন হয়েছিলো।

১৯৫০

১৯৫০ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে হাতে গোনা কয়েকটি কম্পিউটার তৈরী হয়, যার প্রতিটিই ছিলো বৃহদাকায় ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সাধারনত খুব বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষনা প্রতিষ্ঠান বা সরকারী প্রতিষ্ঠানে এই কম্পিউটারগুলো ব্যবহৃত হতো। কম্পিউটারগুলোর কাজ ছিলো মূলত হিসাব নিকাশে সহায়তা করা, তথ্য সংরক্ষন করা। সেইসময় থেকেই একটি কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য আদান প্রদানের প্রয়োজনীয়তা গবেষকরা অনুভব করতে শুরু করেন। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিষয়ক গবেষনা  প্রতিষ্ঠান ডারপা (DARPA) এই বিষয়ে গবেষনা শুরু করে। তখনই কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের ধারনাগুলো তৈরী হতে থাকে। গবেষকেরা নানা রকম থিওরী প্রস্তাব করতে থাকেন।

১৯৬৪

১৯৬৪ সালে এমআইটি (MIT) এর গবেষক লিওনার্দ ক্লাইনরক (Leonard Kleinrock) প্যাকেট সুইচিং নামে একটি ধারনা প্রবর্তন করেন এবং এর উপরে একটি গবেষনাপত্র প্রকাশ করেন।

১৯৬৫

১৯৬৫ সালে গবেষকরা প্রথমবারের মত দুটি কম্পিউটারকে একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করে তথ্য আদান প্রদান করতে সক্ষম হন।

১৯৬৭

১৯৬৭ সালে এমআইটি’র গবেষক লরেন্স রবার্টস (Lawrence G. Roberts), যিনি পরে ডারপা’তে যোগদান করেন,  আরপানেট (ARPANET) নামে একটি নেটওয়ার্ক সিস্টেম প্রস্তাব করেন। তার গবেষনাপত্রের মূল বিষয় ছিল কীভাবে প্যাকেট সুইচিং ব্যবহার করে দুটি কম্পিউটারের মধ্য তথ্য আদান প্রদান করা যায়, যার মাধ্যমে যুদ্ধকালীন সময়ে অন্যান্য সব যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্যুত হয়ে গেলেও সামরিক বাহিনী নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবে।

১৯৬৮

১৯৬৮ সালে ডারপা’র অর্থায়নে আরপানেটের গঠনগত ডিজাইন তৈরী করা হয়। এই ডিজাইনে প্রস্তাবিত লাইনস্পিড ছিল ৫০ কেবিপিএস (kbps)। এই আরপানেটে সংযুক্ত করার জন্য প্রথম কম্পিউটার বা নোড বসানো হয় লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতে (UCLA)। দ্বিতীয় নোডটি বসানো হয় স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট এ। পরবর্তীতে সান্তা বারবারার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া (UC Santa Barbara) তে এবং ইউনিভার্সিটি অব ইউটাহ্ (University of Utah) –এ আরো দুটি নোড বসানো হয়। এখানে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত প্রতিটি কম্পিউটারকে বলা হয় হোস্ট কম্পিউটার।

১৯৬৯

১৯৬৯ এর শেষ নাগাদ এই চারটি হোস্ট কম্পিউটার আরপানেট এ সংযুক্ত ছিল। এটই কম্পিউটারের ইতিহাসের প্রথম কার্যকর নেটওয়ার্ক, যার উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে ইন্টারনেট এর সূচনা হয়।

 

আরো তথ্য পাওয়া যাবে এই ছবিতে:

ইন্টারনেটের ইতিহাসের ইনফোগ্রাফিক
ইন্টারনেটের ইতিহাসের ইনফোগ্রাফিক

ছবিসুত্র: http://www.onlinemba.com/blog/internet-history/

ওয়েব কনসেপ্টস – কাজের সুযোগ (২৪/২৪)

ওয়েব কনসেপ্টস
সপ্তাহ ০৪ – বর্তমান যুগের প্রচলিত টেকনোলজি
লেকচার ০৬ – কাজের সুযোগ

Web Concepts
Week 04 – Modern Technologies
Lecture 06 – Job Opportunity

সম্পূর্ন কোর্সটি করতে রেজিস্ট্রেশন করুন দ্বিমিক কম্পিউটিং এর ওয়েবসাইটে। কোর্সটি সবার জন্য ফ্রি।

ওয়েব কনসেপ্টস – কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (২৩/২৪)

ওয়েব কনসেপ্টস
সপ্তাহ ০৪ – বর্তমান যুগের প্রচলিত টেকনোলজি
লেকচার ০৫ – কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম

Web Concepts
Week 04 – Modern Technologies
Lecture 05 – Content Management System

সম্পূর্ন কোর্সটি করতে রেজিস্ট্রেশন করুন দ্বিমিক কম্পিউটিং এর ওয়েবসাইটে। কোর্সটি সবার জন্য ফ্রি।